ছাতকের আদিবাসীরা প্রধানত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা ব্যাবহার করে থাকেন। যেহেতু ছাতক একটি শিল্প নগরী এলাকা তাই এখানে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ ও বসবাস করে থাকেন সেক্ষেত্রে ভাষার কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায় ।
ছাতকের সংস্কৃতি এখানকার লোকাল পরিবেশ ও অনেকটা সুনামগঞ্জ ও সিলেট কেন্দ্রিক। এখানকার মানুষ সিলেট অঞ্চলের সংস্কৃতির সাথে বেশ মানানসই।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য,লোকগীতি ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্য সাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম প্রমুখ বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের সংগীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসংগীতের ভূমিকা সামান্য।গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে বাউলগান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশে নানা ধরন নৃত্যশিল্প প্রচলিত । এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা ও পালাগানের প্রচলন রয়েছে ।
এখানকার প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের উত্সব-ঈদুল ফিতর, ঈদুল ও আযহা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের, দুর্গাপূজা । বৌদ্ধদের প্রধান উত্সব বুদ্ধ পূর্নিমা, আর খ্রীস্টানদের বড়দিন। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ, অর্থাৎঈদুলফিত্র ও ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরের আগের দিনটি বাংলাদেশে ‘চাঁদ রাত’ নামেপরিচিত। ছোট ছোট বাচ্চারা এ দিনটি অনেক সময়ই আতশবাজির মাধ্যমে পটকাফাটিয়ে উদযাপন করে।
ঈদুল আজহার সময় শহরাঞ্চলে প্রচুর কোরবানির পশুর আগমনহয়, এবং এটি নিয়ে শিশুদের মাঝে একটি উৎসবমুখর উচ্ছাস থাকে। এছাড়া বাংলাদেশের সর্বজনীন উত্সবের মধ্যে পহেলা বৈশাখ প্রধান । গ্রামাঞ্চলে নবান্ন, পোষ পার্বণ ইত্যাদি লোকজ উত্সবের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, এবং ভাষা আন্দোলনের শদীদদের স্মরনে ২১ ফেব্রুয়ারী তারিখে শদীদ দিবস পালিত হয় ।
ছাতক উপজেলার সংস্কৃতিক বিষয়ক তথ্যঃ
ছাতকের সাহিত্য সাংবাদিকতার ইতিহাস এক গৌরবময় ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস । কারণ এই ছাতকে জন্মগ্রহণ করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, সুসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ মুসলিম চৌধুরী , শ্রী অশ্বিনী কুমার শর্মা, সাহিত্যিক দেওয়ান আহবাব চৌধুরী, কবি রিয়াছত আলী, পল্লীকবি দূর্বিনশাহ, গীতিকার গিয়াসউদ্দিন আহমদ প্রমূখ।
সিলেট বিভাগের সাহিত্য সাংবাদিকতায় ছাতক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকার নিদর্শণ পাওয়া যায়। জানা যায় ছাতকে সাংবাদিকতার পথিকৃৎ শিক্ষাবিদ শ্রী অশ্বিনী কুমার শর্মা ১৩১৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯০৬খ্রিস্টাব্দে ছাতক থেকে মঙ্গলা নামে একখানা পত্রিকা সম্পাদন করতেন । ১৯০৯খ্রিস্টাব্দে ঢাকা প্রবাসী সিলেটিদের সমন্বিত প্রয়াসে যুবক সুহৃদ নামে যে পত্রিকা যাত্রা শুরু করেছিল, সেটি সম্পাদনার দায়িত্বও তার উপর বর্তেছিল। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি সুনামগঞ্জ জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
মরমী ও সাধক কবি দূর্ব্বীন শাহ’র জন্ম ১৩২৭ বঙ্গাব্দের ১৫ কার্তিক, ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ। তিনি ছাতক শহরের অদূরে সুরমা নদীর উত্তরপারের নোয়ারাই গ্রামের তারামণি টিলায় (পরবর্তীতে দূর্ব্বীন শাহ’র নামানুসারে দূর্ব্বীন টিলা নামকরণ করা হয়) জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করেন। মরমী কবি দূর্ব্বীন শাহ’র সঙ্গীতের সুর ও বাণীর ঐন্দ্রজালিক প্রভাবে বিমোহিত হতো গ্রামবাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। কেননা তার গানের ভাষা ছিল প্রকৃতির মতোই সহজ-সরল-প্রঞ্জল ও আড়ম্বরমুক্ত। অত্যন্ত সাধারণ বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর গান শুরু হলেও পরিণতিতে গূঢ় অর্থের দিকে তা মোড় নিয়েছে। এক কথায় সাধারণের মধ্যে অসাধারণ হয়ে উঠে তার সঙ্গীত। গ্রাম বাংলার বুলবুল দূর্ব্বীন শাহ’র কন্ঠেও আমরা শুনি,
নির্জন যমুনার কূলে, বসিয়া কদম্বতলে,
বাজায় বাঁশি বন্ধু শ্যামরায়-হায়, বাজায় বাঁশি ।।
লোককবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ । জন্ম:১৪ আগস্ট ১৯৩৫ খ্রি. সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা শিবনগর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৭৪ খ্রি. থেকে পান্ডুলি আকারে গান লিপিবদ্ধ করেন। ১৯৭৪ খ্রি. থেকে বাংলাদেশ বেতারের অনুমোদিত গীতিকার। বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিবিশনের ‘ক’ শ্রেণীর গীতিকারও।‘সিলেট পরথম আজান ধ্বনি বাবায় দিয়াছে’, ‘ও বাবা শাহপরান আউলিয়া’, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়রে যাদুধন’, ‘প্রান কান্দে মন কান্দেরে, কান্দে আমার হিয়া’, ‘প্রেমের মরা জ্বলে ডুবেনা’-সহ অসংখ্য গানের জনপ্রিয় গাণের রচয়িতা গিয়াস উদ্দিন আহমেদের গানের সংখ্যা ১হাজারেরও বেশি।
আমরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস