শিল্পনগরী ছাতকের ইতিহাস ও ঐতিহ্য :-
........................................................
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা উঁচু-নীচু পাহাড়, খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওড় ও সবুজের সমারোহে সুরমা, চেলা ও ধলাই নদীর মোহনায় সুস্বাধু কমলালেবু আর চুন ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বানিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ছাত্তিরবাজার, ছাতার বাজার ও পরে ছাতকবাজার নামে এখানে একটি ব্যবসা কেন্দ্রের গোড়া পত্তন হয়।
১৭৭৪ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময় জর্জ ইংলিশ ব্যবসার করার জন্যে স্ব-পরিবারে এখানে অবস্থান করে চুনা পাথরের ব্যবসার আরো প্রাতিষ্টানিক রূপ দেন। সে সময়ে ছাতক চুনশিল্পে সারা বিশ্বে পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করে।
১৮১৮সালে এইচ টি রাইট ও ১৮৫০সালে জর্জ ইংলিশের মৃত্যু হলে তাদের স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতে হ্যানরী ইংলিশ ১৮৫০সালে বাগবাড়িস্থ টিলার সুউচ্চ চুড়ায় ঐতিহাসিক সাহেব মিনার নির্মান করেন।
যার নির্মান শৈলী আজ ও ভ্রমন বিলাসীসহ সকল মহলের কাছে গৌরবময় ঐতিহ্যে লালিত হয়ে আসছে। ১৮৬৯সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া জেনারেল ষ্টিম নেভিগেশন কোম্পানী গোয়ালন্দ থেকে সিলেট পর্যন্ত জাহাজ চলাচল শুরু করলে ছাতকের ষ্টেশনকে একটি প্রধান জাহাজ ষ্টেশন হিসেবে গন্য করা হতো।
পরবর্তীতে জয়েন্ট ষ্টীমার কোম্পানীর যৌথ মালিকানা ক্রয় করে (ভূমিসহ) আইজিএনআরএসএন রেলওয়ে কোম্পানী লিঃ একক মালিকানা গ্রহন করে। পাকিস্তান স্বাধীনের পর কোম্পানীটি পাকিস্তান রিভার্স ষ্টিমার্স কোম্পানী (পিআরএসসি) নামে অভিহিত হয়।
পরবর্তীতে এটি ম্যাকনীল এন্ড কিলবার্ন লিঃ নাম ধারন করে। যাতে ১একর ৮০শতক ভূমিতে অফিস, বাংলো ও পাথর রাখার সাইড এখনও রয়েছে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে কমলালেবু ও চুন ব্যবসার সাথে সিঙ্গেল-বোল্ডার ও বালু-পাথরের ব্যবসায় আরো সমৃদ্ধি লাভ করে। চুনা পাথরের সহজলভ্যতায় ১৯৩৭ সালে ৬০ হাজার মেট্রিকটন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সুরমা নদীর উত্তর পারে প্রতিষ্টিত হয় আসাম-বেঙ্গল সিমেন্ট কারখানা।
প্রায় ২০কিলোমিটার রোপলাইনের (রজ্জুপথ) মাধ্যমে ভারতের আসাম রাজ্যের কুমরায় নিজস্ব খনি থেকে চুনা পাথর নিয়ে আসা হয়। যা- ১৯৬৫সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানা নামে অভিহিত হয়।
১৯৫২সালে সিলেট থেকে ছাতকবাজার পর্যন্ত ৩৪কিঃমিঃ রেল লাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৬৬সালে রেলওয়ের নিজস্ব পাথর কোয়ারী ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর পরিবহনের লক্ষ্যে ১৯৬৮সালে ১৯কিঃমিঃ দীর্ঘ ছাতকÑভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ নির্মান করা হয়। ১৯৭৫সালের জুন মাসে ১শ’ ৪০একর ভূমির উপর স্থাপিত সিলেট পাল্প এন্ড পেপারমিল উৎপাদন শুরু করে। এখানে পেপার মেশিন স্থাপন না করায় অব্যাহত লোকসানের বোঝায় ২০০২সালের ৩০নভেম্বর মিলটি পে-অফ ঘোষনা করা হয়। ১৯৮৮সালের ২৭অক্টোবর রেলওয়ের মালিকানায় ১০বছর মেয়াদি কাঠের স্লিপারের পরিবর্তে ৫০বছর মেয়াদি কংক্রিট স্লিপার উৎপাদনে দেশের একমাত্র প্রিস্ট্যাট কংক্রিট স্লিপার প্ল্যান্ট তৈরী করা হয়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫হাজার পিস্ হলেও সিকিভাগ অর্জিত হয়নি। ১৯৯৩সালে এখানে আইনপুর সিমেন্ট কারখানা উৎপাদনে যাবার পর মালিকানা বদল হলে প্রাইম সিমেন্ট কারখানা নামে অভিহিত হয়। এটি এখন বন্ধ রয়েছে। ১৯৯২সালে প্রস্তাবিত আকিজ সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, ১৯৬২সালে প্রস্তাবিত জালালাবাদ সিমেন্ট লিঃ এখনও প্রতিষ্টা করা হয়নি। এককালের সহস্রাধিক চুন উৎপাদনকারি প্রতিষ্টানের (পাজু) মধ্যে এখন রয়েছে সিকিভাগ।
বেড়েছে স্টোন ক্রাশার মেশিনসহ অসংখ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প। তবে প্রস্তাবিত আকিজ সিমেন্ট কারখানার একাংশে এখন আকিজ বেভারেজ ফুড লিঃ নামে একটি কারখানা রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট পাল্প এন্ড পেপারমিল বিক্রির পর নিটল-নিলয় গ্রুপ এখানে কার্টিজ পেপার মিল হিসাবে পরিচিত। এদিকে দু’পারের মানুষের মধ্যে সান্নিধ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে ২০০৪ সালে সুরমা নদীর উপর ব্রিজ নির্মানের কাজ শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায় বর্তমান সরকাররে সময়ে আবারও কাজ এগিয়ে চলছে। ১৯৮৪ সালে ছাতক থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। এসময় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনে ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে ছাতক ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা গঠনের পর প্রথম নির্বাচনে আলহাজ্ব সুজন মিয়া চৌধুরী, ১৯৯১সালে মুহিবুর রহমান মানিক, ২০০৯সালে মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান ও ২০১৪সালের ১৯ফেব্রুয়ারি অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৯ইং সনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে মোঃ ফজলুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে ছাতক পৌরসভায় উন্নীত হয়। এবং ছাতক পৌরসভাটি ১ম শ্রেণির পৌরসভার আওতাধীন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস